Abhishek Banerjee ED: মুখোমুখি কলকাতা হাই কোর্টের আইনজীবী আমিনুদ্দিন খান

Read Time:10 Minute

পায়েল মুখার্জী: 24Hrs Tv ওয়েব ডেক্স: নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তে ফের তৃণমূল নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে তলব ইডির। সূত্রের খবর অনুযায়ী অভিষেকের সংস্থা ‘লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস’ নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যই তাঁকে ডেকে পাঠানো হয়েছে। এর আগে এই মামলাতেই ৩ অক্টোবর অভিষেককে সিজিওতে তলব করেছিল ইডি। তবে এই ক্ষোভ-বিক্ষোভের মাঝেও নিজের ব্যক্তিগত এক্স হ্যান্ডেলের মাধ্যমে অভিষেক জানিয়েছিলেন যে পূর্ব নির্ধারিত দলীয় কর্মসূচির কারণে ইডির সামনে হাজির হবেন না তিনি। এমনকী বিজেপি ও কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগও তোলেন তৃণমূল সাংসদ। আর এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি নিয়ে 24Hrs Tv-র কাছে একটি এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে নিজের মতামত ও বক্তব্য জানালেন হাই কোর্ট এর অত্যন্ত পরিচিত আইনজীবী আমিনুদ্দিন খান।

প্রশ্ন : কেমন আছেন ?
উত্তর : ভালো আছি।

প্রশ্ন : প্রথমে আপনার সঙ্গে আলোচনা করবো মনরেগা প্রকল্প নিয়ে , এই প্রকল্প সম্পর্কে একটু বলুন

উত্তর : MGNREGA ( Mahatma Gandhi National Rural Employment Guarantee Act ) কংগ্রেস এর আমলে মনমোহন সিং পাস করেছিল। এর প্রস্তাব উত্থাপন করেছিল তৎকালীন সিপিআই এম। এটি একটি ভালো প্রকল্প। যেখানে গ্রামের গরিব মানুষের বাৎসরিক ১০০ দিনের কাজের গ্যারান্টি দেওয়া আছে। গ্রামের রাস্তাঘাট মেরামতি , খাল কাটা , গ্রামের জঞ্জাল সাফাই , মাটি কাটা , পুকুর খনন , এছাড়া নানাবিধ কাজ করানো হয় , সরকারের নির্ধারিত মজুরি দিয়ে। এটি কেন্দ্র সরকারের প্রকল্প।

প্রশ্ন : বর্তমানে বাংলার রাজনীতিতে এই প্রকল্প নিয়ে এতো জলঘোলা কেন ?

উত্তর : এখন কেন্দ্রের বক্তব্য যে এই প্রকল্পে পশ্চিমবঙ্গে দুর্নীতি হয়েছে। প্রায় ২৫ লক্ষ জব কার্ড ভুয়ো। যেখানে রাস্তা হয়নি , সেখানে রাস্তার নাম করে টাকা তোলা হয়েছে। খাল পরিষ্কার করার নামে টাকা তোলা হয়েছে কিন্তু খাল পরিষ্কার করা হয়নি। গাছ লাগানোর কথা ছিল গাছ না লাগিয়ে টাকা তোলা হয়েছে। নানান দুর্নীতির খবর কেন্দ্র পেয়েছে বলে দাবি করেছে। এছাড়া এই দুর্নীতিতে কিছু সরকারি আধিকারিক ও জড়িত আছে বলে খবর আছে। যার জন্য এই প্রকল্পের টাকা বন্ধ করে দিয়েছে।

প্রশ্ন : অভিষেক ব্যানার্জি রাজভবনের সামনে ধর্ণা দিয়েছে , ১০০ দিনের টাকার দাবিতে , কি বলবেন ?

উত্তর : দেখুন অভিষেক ব্যানার্জি টাকার দাবিতে যে ধর্ণা দিচ্ছে সেটা তো অযৌক্তিক নয়। একটা এত ভালো প্রকল্প থেকে বাংলার মানুষকে বঞ্চিত করা উচিত নয়। যারা দোষী তাদের দুর্নীতির তদন্ত করুক কেন্দ্র। দরকার হলে জেলে পাঠাক , কিন্তু তার জন্য যারা সত্যিই জব কার্ড হোল্ডার , তাদের টাকা বন্ধ করা উচিত নয়। এটা গরিব মানুষের অধিকার কেড়ে নেওয়ার সমান।

প্রশ্ন : তৃণমূল বলছে বিজেপি ভোটে হেরে গিয়ে বাংলার মানুষের টাকা বন্ধ করে শাস্তি দিচ্ছে-

উত্তর : সেটা রাজনৈতিক বিষয়। আসলে তৃণমূল বিজেপির মধ্যে আমার মনে হয় আঁতাত আছে। রাজ্য বলে টাকা চাই , কেন্দ্র বলে টাকা দেবোনা। কিন্তু দেখার বিষয় হলো যে কেউই দুর্নীতির তদন্ত করছেনা বা দুর্নীতির বিষয়ে উচ্চবাচ্য করছেনা। রাজনীতিতে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়।

প্রশ্ন : বাংলার রাজনীতিতে বিজেপির ভূমিকা কেমন বলে মনে হয় ?

উত্তর : বিজেপি কোনোদিনও বাংলায় ক্ষমতায় আসতে পারবেনা। সেটা ওরাও জানে। তাই ওরা মন থেকে চায়না যে তৃণমূল দুর্নীতির তদন্তে শেষ হয়ে যাক। কেননা তৃণমূল শেষ হলে বাংলায় সিপিআইএম এর সম্ভবনা বাড়বে। সেটা কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের মাথাব্যাথার কারণ হবে বলে আমার মনে হয়। আর বিজেপি এখন যারা করে বাংলায় সব কটাইতো তৃণমূলের থেকে এসেছে।

প্রশ্ন : বাংলার শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে আপনার মতামত :

উত্তর : দেখুন শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে কলকাতা হাই কোর্ট এ কেস চলছে। সেখানে সত্যিই বড়ো দুর্নীতির খবর পাওয়া গেছে। জাস্টিস অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় প্রথম এবিষয়ে সক্রিয় হয়। এবং এই দুর্নীতির মাথাদের ধরার জন্য তিনি বদ্ধপরিকর। এই দুর্নীতির তদন্ত সিবিআই করছে , ইডি করছে। প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জি জেলে , প্রাক্তন চেয়ারম্যান জেলে , বহু উচ্চপদস্থ আধিকারিক জেল খাটছে।

প্রশ্ন : ইডি, সিবিআই অভিষেক ব্যানার্জিকে ডাকছে কেন ?

উত্তর : ইডি সিবিআই সুনির্দির্ষ্ট কারণ ছাড়া কারোকে ডাকেনা। নিশ্চয় তাদের কাছে এভিডেন্স আছে। তাদের মনে হয়েছে যে অভিষেক ব্যানার্জির পরিবার এই নিয়োগ দুর্নীতি তে যুক্ত। ওনার কোম্পানির মাধ্যমেই কালো টাকা সাদা হয়েছে বলে অভিযোগ। তাছাড়া ওনার কোম্পানির ডিরেক্টর সুজয় কৃষ্ণ ভদ্র জেল খাটছে। নিশ্চয় কিছু প্রমান আছে সিবিআই এর কাছে। নাহলে ডাকবে কেন।

প্রশ্ন : অভিষেক ব্যানার্জি বলছে ইডি সিবিআই কোনো কাজ করেনা , ওদের কোনো তদন্ত শেষ হয়না।

উত্তর : সেটা উনি ওনার মতো করে বলেছেন , কিন্তু আমার মনে হয় ইডি সিবিআই মানুষের কাছে বিশ্বাস যোগ্যতা হারাচ্ছে , বহু তদন্ত সিবিআই কে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাদের গতিপ্রকৃতি খুব শ্লথ। এবং শেষ পর্যন্ত কিছুই হয়নি। সারদাসহ চিটফান্ড কেলেঙ্কারির তদন্তের কি হলো তা মানুষ জানেনা। কবে টাকা ফেরত পাবে গরিব মানুষ তার কোনো খবর নেই। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নোবেল চুরি হলো , ১৫ বছর হয়ে গেলো চোর ধরা পড়লো না। এগুলোকে তদন্ত বলেনা। এই জন্যই সুপ্রিম কোর্ট বলেছিলো যে – সিবিআই খাঁচায় বন্দি তোতাপাখি। কেন্দ্র যেমন নাচায় ওরা তেমন নাচে।

প্রশ্ন : অভিষেক ব্যানার্জি কে শিক্ষক দুর্নীতি জড়ানো কি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রনোদিত বলে মনে হয় আপনার , তৃণমূল কংগ্রেস তো তাই দাবি করছে।

উত্তর : মহামান্য কলকাতা হাই কোর্ট এর বিচারপতি অমৃতা সিনহার নির্দেশ ছিল যে কুন্তল চ্যাটার্জির চিঠি মামলায় সিবিআই অভিষেক ব্যানার্জি কে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে। সেটা নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট হয়। পরে তা আবার হাই কোর্ট এ ফিরে আসে। জাস্টিস অমৃতা সিনহা ও সেই একই নির্দেশ বহাল রাখে। গত শুক্রবার জাস্টিস সৌমেন সেন এর ডিভিশান বেঞ্চ এ অভিষেক ব্যানার্জির তদন্তে সহযোগিতার নির্দেশ দেন। তো এখানে কোর্টের পর্যবেক্ষণ আছে। শুধু রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রনোদিত বলে আমার মনে হয়না।

প্রশ্ন : আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
উত্তর : আপনাকেও , ভালো থাকবেন।

প্রসঙ্গত এর আগে ১৩ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে না গিয়ে ইডির দফতরে হাজিরা দিয়েছিলেন অভিষেক। ফের ২৮ সেপ্টেম্বর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায়কে তলব করেছিল ইডি। দিল্লিতে তৃণমূলের ধরনা কর্মসূচির দিনই হাজিরার জন্য তলব করে নোটিস পাঠায় ইডি। এছাড়া তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদককে ৩ অক্টোবর সিজিও কমপ্লেক্সে সকাল সাড়ে ১০টায় হাজিরার নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। অপরদিকে সেই দিনই পূর্বের ঘোষণা অনুযায়ী দিল্লিতে দলের কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন অভিষেক। ১০০ দিনের কাজের বকেয়া টাকার দাবিতে যন্তরমন্তরে বিক্ষোভের পাশাপাশি কৃষি ভবনে ধরনাও দেয় তৃণমূল। কিন্তু এই মুহূর্তে,৯ অক্টোবর অর্থাৎ সোমবার অভিষেক ইডির সামনে হাজির হন কি না, সেটাই দেখার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *