আদিত্য এল ১ উৎক্ষেপণে সাক্ষী রইল কলকাতার দুই পড়ুয়া

Read Time:6 Minute

সৌরভ দত্ত 24Hrs Tv ওয়েব ডেস্ক : প্রতীক্ষায় অবসান। চন্দ্রযান ৩ চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণের কিছুদিন পরেই আদিত্য এল ১ আজ সকাল ১১টা ৫০মিনিটে পাড়ি দিল মহাকাশে। ইতিমধ্যে চন্দ্রযান ৩ সাফল্যে নজির গড়েছে ভারত। এবার সূর্যের ওপর নজরদারির পালা। এই উৎক্ষেপণের জন্য তাকিয়ে ছিল ভারত সহ সারা বিশ্ব। দেশের তাবড় তাবড় বিজ্ঞানীদের পাশাপাশি কলকাতার দুই খুদে বিজ্ঞান অনুসন্ধিৎসুও উৎক্ষেপণে সাক্ষী থাকার সুযোগ পেয়েছে। শ্রীহরিকোটায় পৌঁছে টগবগ করে ফুটছে কলকাতা ইয়ং হরাইজনস স্কুলের দুই ছাত্র নীলার্ক পাহাড়ি ও নীলাব্জ পাহাড়ি। ভারতের প্রথম সূর্য অভিযান প্রত্যক্ষ করার সুযোগ পেয়েছে ভ্রাতৃদ্বয়। ইসরোর অন্যতম অগ্রণী স্পেস টিউটর সংস্থা ‘নাসো’র দেশব্যাপী পরীক্ষায় সাফল্য অর্জন করে। ভারতের সূর্য অভিযান নিয়ে প্রস্তুতি বহুদিনের। এ বিষয়ে উৎসাহের শেষ ছিল না দশম শ্রেণির নীলার্ক পাহাড়ি ও চতুর্থ শ্রেণির নীলাব্জ পাহাড়ির। দুই ভাই দেশব্যাপী অনুষ্ঠিত নাসো-র অ্যাস্ট্রোনমি পরীক্ষায় দুটি পৃথক বিভাগে যথাক্রমে প্রথম ও তৃতীয় স্থান অর্জন করে। সেই সুবাদে পশ্চিমবঙ্গ থেকে তারা ‘গ্র্যান্ড প্রাইজ’ হিসাবে আদিত্য এল ১ উৎক্ষেপণ কেন্দ্রে উপস্থিত থাকার সুযোগ পেয়েছে। শ্রীহরিকোটা থেকে নীলার্ক জানিয়েছে, ‘শহরে সাজো সাজো রব। পথচলতি লোকজনের মুখেও আদিত্য এল ১ নিয়ে উৎসাহের শেষ নেই। যে পিএসএলভি সি৫৭ রকেটে করে ভারতের প্রথম স্পেস অবজার্ভেটরি আদিত্য এল ১ যাবে, তার মডেল বিভিন্ন রেলওয়ে স্টেশনে রাখা আছে। ইতিমধ্যে, পিএসএলভি সি৫৭ রকেটটি শ্রীহরিকোটার সেকেন্ড লঞ্চ প্যাডে নিয়ে আসা হয়েছে। খানিকটা দূর থেকে আমরা তা প্রত্যক্ষও করেছি।’

আদিত্য এল ১-এর কারিগরি ও স্থাপনার বিষয়ে নানান খুঁটিনাটিও নীলার্ক, নীলাব্জর ঠোঁটস্থ। নীলার্ক জানিয়েছে, ‘ইতালিয়-ফরাসি গণিতবিদ জোসেফ লুই ল্যাগরেঞ্জের নামে নামকরণ হয়েছে ‘ল্যাগরাঞ্জিয়ান পয়েন্ট’ বা ‘ল্যাগরেঞ্জ পয়েন্ট’। এই পয়েন্টে স্যাটেলাইট স্থাপিত হলে সবসময় সূর্যের উপর নজরদারি করা সম্ভব হবে। স্থানটি পৃথিবী থেকে প্রায় ১৫ লক্ষ কিলোমিটার। এর ফলে ভারত সহ সারা বিশ্বের কাছে বহু অজানা দিক উঠে আসবে। সূর্য নিয়ে গবেষণায় ভারত পৌঁছে যাবে শ্রেষ্ঠত্বের শিখরে।’ উল্লেখ্য, নীলার্ক এর আগে পঞ্চাশটিরও বেশি অলিম্পিয়াডে কৃতিত্বের সাক্ষর রেখেছে। ডিসকভারি স্কুল সুপার লিগে তাদের টিম ‘ওয়েস্টবেঙ্গল ওয়ান্ডার্স’ দেশে প্রথম স্থান অর্জন করে এবং আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা যাওয়ার ছাড়পত্র পায়। যদিও ভিসা সংক্রান্ত জটের কারণে নাসা-য় এখনও যাওয়া হয়ে ওঠেনি। এর আগে লাদাখ অবজার্ভেটরি ও তিরুবনন্তপুরমের মহাকাশ গবেষণা সংস্থায় যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল নীলার্ক।

অতি সম্প্রতি, আর্যভট্ট ম্যাথেমেটিক্স অলিম্পিয়াডে পৃথক বিভাগে নীলার্ক প্রথম ও নীলাব্জ দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছে। ইন্ডিয়ান স্পেস সায়েন্স অলিম্পিয়াডে নীলার্ক পেয়েছে প্রথম স্থান। ইন্টারন্যাশনাল এইরোস্পেস অলিম্পিয়াডেও পরপর দু-বছর প্রথম। ইন্টারন্যাশনাল অলিম্পিয়াড অফ স্টেম অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোনমিতেও পরপর দু-বছর প্রথম। পিসা প্রতিযোগিতায় ভারতে অর্জন করেছে প্রথম স্থান। মাত্র ০.২৫ নম্বরের জন্য ইন্টারন্যাশনাল স্পেস অলিম্পিয়াডে পেয়েছে দ্বিতীয় স্থান এবং নিখরচায় দ্বিতীয়বার নাসা যাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছে। দাদার পাশাপাশি ভাই নীলাব্জও ডজনখানেক অলিম্পিয়াডে প্রথম তিনে নিজের জায়গা করে নিয়েছে। সবমিলিয়ে দুই ভাই পেয়েছে ১৫০টির বেশি মেডেল-ট্রফি। নীলার্ক ও নীলাব্জ দুজনেরই বেজায় ইচ্ছা, ভবিষ্যতে মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোতে দেশের সেরা বিজ্ঞানীদের সঙ্গে যোগ দেওয়া। শ্রীহরিকোটার উৎক্ষেপণ কেন্দ্রে দুই ভাইয়ের সঙ্গী হয়েছেন তাদের মা নীলাঞ্জনা মাইতি। তিনিও ছেলেদের এই অভাবনীয় সুযোগ প্রাপ্তিতে বেজায় খুশি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *