রোহিতের ব্যাটিং,শামি , বুমরাহের বোলিংয়ে ভর করে বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে ভারত

Read Time:6 Minute

24Hrs Tv ওয়েব ডেস্ক : সৌরভ দত্ত : ২০১৯ সালের ৩০ জুন এজবাস্টনে ৫০ ওভারের বিশ্বকাপে ৩১ রানে হার।এর ঠিক তিন বছর পর ২০২২ সালের ১০ নভেম্বর অ্যাডিলেডে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে আরও লজ্জাজনক ভাবে ১০ উইকেটে নতজানু হয়ে প্রতিযোগিতা থেকেই ছিটকে যাওয়া। সেই দুই হারের জ্বালা বুকে নিয়ে বয়ে বেড়াচ্ছিল ভারতীয় দল। ২০২৩ সালের ২৯ অক্টোবর, গত দুই আইসিসি ইভেন্টে সেই জোড়া হারের বদলা লখনউয়ের একানা স্টেডিয়ামে সুদে-আসলে তুলে নিল ভারত। একইসঙ্গে ‘ছয়ে ছয়’ করে চলতি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে চলে গেল রোহিত শর্মার টিম ইন্ডিয়া । মহম্মদ শামির দুরন্ত বোলিং। তাঁর বোলিং ফিগার দেখার মতো ৭-২-২২-৪। জশপ্রীত বুমরাহের ঝাঁজ। তাঁর বোলিং ফিগারও দেখার মতো। ৬.৫-১-৩২-৩। এবং এর সঙ্গে যোগ হয়েছিল কুলদীপ যাদবের স্পিনের ভেল্কি। ফলে ২৩০ চেজ করতে গিয়ে মাত্র ১২৯ রানে অলআউট হয়ে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিল জস বাটলারের ইংল্যান্ড ।

চেজ করতে নেমে একটা সময় দুই ওপেনার দাউইদ মালান ও জনি বেয়ারস্টো দ্রুত গতিতে রান তুলতে থাকেন। মাত্র ৪.৪ ওভারেই উঠে যায় ৩০ রান। রাতের লখনউতে শিশির প্রভাব বাড়িয়েছে। মনে হচ্ছিল এই প্রথমবার ভারত হারের মুখ দেখতে পারে। কিন্তু ঠিক সেই ওভারের বাকি দুই বলে বিপক্ষকে জোড়া ধাক্কা দেন ‘বুম বুম বুমরাহ’। মালানকে বোল্ড করার পরের বলেই জো রুট লেগ বিফোর আউট হন। এর আগে বিরাট ‘০’-তে ফিরেছিলেন। এবার ‘ফ্যাব ফাইভ’-এর আর মেম্বার রুটের নামের পাশে ‘গোল্ডেন ডাক’ লেখা রইল।

ইংরেজদের পতনের সূত্রপাত। এবার ‘খেলা শুরু’ করলেন ‘সহেসপুর এক্সপ্রেস’। তাঁর আগুনে পেসের আঁচে উড়ে গেল বেন স্টোকস ও বেয়ারস্টোর স্টাম্প। রেহাই পেলেন না মইন আলি। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে গত ম্যাচে ৫৪ রানে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন শামি। এদিনও তিনি বিপক্ষের ব্যাটারদের ঘুম কেড়ে নিলেন। এর মধ্যে সাহেবদের গরিমায় আঘাত হানলেন কুলদীপ। অধিনায়ক বাটলারের স্টাম্প যেভাবে কুলদীপ উড়িয়ে দিলেন, সেটা নিঃসন্দেহে ‘বল অফ দ্য ডে’। এরসঙ্গে আর ইংল্যান্ডের ব্যাটিংয়ের কিছুই বাকি ছিল না। বাকি কাজটা সারলেন রবীন্দ্র জাদেজা। লক্ষ্য ছিল বিশ্বকাপে ‘ছয়ে ছয়’ করে সেমিফাইনালের টিকিট কনফার্ম করে নেওয়া। ইংল্যান্ডের দুরন্ত বোলিংয়ের বিরুদ্ধে যেখানে সিংহভাগ ভারতীয় ব্যাটার ব্যর্থ হন, সেখানে শতরান হাতছাড়া করলেও, লড়াকু ইনিংস খেললেন রোহিত। তাঁকে যোগ্য সঙ্গত দিলেন লোকেশ রাহুল । লোয়ার অর্ডারে লড়াকু ইনিংস খেললেন সূর্যকুমার যাদবও।

নির্ধারিত ৫০ ওভারে নয় উইকেটর বিনিময়ে ভারতীয় দল ২২৯ রান তুলল। রোহিত ১০১ বলে ৮৭ রান করেন। অর্ধশতরানের দোরগোড়ায়, বড় শট মারতে গিয়ে ৪৯ রানে আউট হতে হয় সূর্যকে। রান কম হলেও, লখনউয়ের চ্যালেঞ্জিং পিচে কিন্তু ইংল্যান্ডকে যে ম্যাচ জিততে হলে বেশ লড়াই করতে হবে, সেটা জানা ছিল। আর ঠিক সেটাই হল। প্রথমে দুই পেসারের দাপট এবং পরে স্পিনারদের ভেল্কির কাছে হার মানল গতবারের বিশ্বজয়ীরা।রবিবার নিজেদের মরণ-বাঁচন ম্যাচে টসে জিতে প্রথমে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন জস বাটলার। এই প্রথমবার চলতি বিশ্বকাপে রান তাড়া করার বদলে প্রথমে ব্যাট করে ভারতীয় দলকে বোর্ডে রান খাড়া করতে হত। তবে শুরুটা একেবারেই ভাল করতে পারিনি টিম ইন্ডিয়া। লখনউয়ের একানা স্টেডিয়ামের স্লো পিচে এদিন খালি হাতে ফিরে গিয়েছিলেন বিরাট কোহলি । শুভমান গিল ফিরলেন ৯ রানে। শ্রেয়স আইয়ার আবার শর্ট বলে বিদ্ধ হয়ে ফিরলেন ৪ রানে। ফলে মাত্র ৪০ রানে চলে গিয়েছিল ৩ উইকেট। সেখান থেকে লোকেশ রাহুলকে নিয়ে লড়লেন হিটম্যান। চতুর্থ উইকেটে দুজন যোগ করলেন ৯১ রান। ৬৬ বলে নিজের অর্ধশতরান পূরণ করেন রোহিত। তবে ঠিক যখন মনে হচ্ছিল শুরুর ধাক্কা সামলে ভারতীয় দল বড় রানের দিকে এগোচ্ছে, তখনই ৩৯ রানে রাহুলকে ফেরান উইলি। রোহিত বিপক্ষের লেগ স্পিনার আদিল রশিদের বলে আউট হয়ে শতরান হাতছাড়া করেন। হার্দিকের অনুপস্থিতিতে দলে সুযোগ পাওয়া সূর্যকুমার রোহিত আউট হয়ে গেলেও লড়াই চালিয়ে যান। তবে তাঁকে জাদেজা (৮), শামি (১), কেউই সঙ্গ দিতে পারেননি। বুমরাহ ১৬ রান করে খানিকটা সঙ্গ দেন। ফলে ৯ উইকেটে ২২৯ রান তুলে দেয় ভারত। আর সেই রান চেজ করতে গিয়ে শামি ও বুমরাহের ঝড়ের কাছে উড়ে গেল ইংল্যান্ড। ফলে চলতি কাপ যুদ্ধে ‘ছয়ে ছয়’ করার সঙ্গে গত দুই আইসিসি ইভেন্টে জোড়া হারের বদলা নিয়ে সেমিফাইনালে চলে গেল টিম ইন্ডিয়া। এবার সামনে ভারতের সামনে শ্রীলঙ্কা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *