
এবার দোকানে বসে দুয়ারে রেশন !
২৪ আওয়ার্স টিভি ওয়েব ডেস্ক : দুয়ারে রেশন আদালত অসংবিধানিক রায় দিয়েছে, এতে করে রেশন ডিলাররা পড়েছে মহা ফাঁপড়ে। জলে কুমির ডাঙ্গায় বাঘ। রেশন ডিলাররা দুয়ারের রেশন করলে আদালত অবমাননার নোটিশ পেতে পারে আবার দুয়ারে না গেলে খাদ্য দপ্তরের রোষের মুখে পড়তে পারে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বেশ কিছু অসাধু রেশন ডিলার তারা তাদের দোকানে বসে অথবা দোকান থেকে বেশ কিছুটা দূরে গিয়ে দুয়ারের মুডে স্লিপ বের করছে। গত শুক্রবার পর্যন্ত বেশ কিছু এলাকায় এমন ভাবেই রেশনবিলি হয়েছে। এছাড়াও বেশকিছু রেশন ডিলারকে আদালতের রায়কে অবমাননা করে দুয়ারে রেশন বিলি করতে দেখা গেছে। ইতিমধ্যে আদালত অবমাননার দায়ে হুগলি জেলা খাদ্য নিয়ামক এবং ঝাড়গ্রাম জেলা খাদ্য নিয়ামককে মামলা কারীদের আইনজীবী নোটিশ ধরিয়েছেন। সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে এখনো বেশ কিছু আধিকারিক, জেলা/মহকুমা খাদ্য নিয়ামক, ইন্সপেক্টর, রেশন ডিলারদের এই নোটিশ আসতে পারে ও তাদেরকে হাইকোর্টে হাজিরা দিতে হতে পারে। আদালত দুয়ারে রেশনকে অসংবিধানিক এবং আল্ট্রা ভাইরাস উল্লেখ করার পরও দুয়ারে রেশন প্রকল্পের খাতে রাজ্য সরকারের অর্থ দপ্তর আদেও কি আর অতিরিক্ত অর্থ খরচ করতে পারবে?উঠছে প্রশ্ন।
আদালতের রায়কে কার্যকরী করার উদ্যোগ রাজ্যের প্রশাসন কে নিতে হবে না হলে রাজ্য সরকারের আদালত অবমাননার দায়ে আবারো হাইকোর্টে মুখ পুড়তে পারে। শোনা যাচ্ছে রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে যাচ্ছে কিন্তু সুপ্রিমকোর্ট থেকে কোন রায় ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের রায়ই মেনে চলতে হয়। সুপ্রিম কোর্ট যাতে এক তারফা রায় দান করতে না পারে সেই জন্য রেশন ডিলাররা আগে থেকেই ক্যাবিয়েট গঠন করে এসেছে। ইতিমধ্যে রেশন ডিলারদের যারা জোর করে দুয়ারে যেতে বাধ্য করাচ্ছে তাদের তথ্য মামলাকারী আইনজীবীদের হতে পৌঁছে গেছে। অভিজ্ঞ মহলের ধারণা এতে করে রাজ্য সরকারই লাভবান হবে। রাজ্যে যে পরিমাণ ঋণের বোঝা এবং বিভিন্ন জন্মুখী প্রকল্প চলছে তাতে করে সরকারি কোষাগর কিছুটা স্বস্তি পাবে।
সর্বভারতীয় রেশন ডিলার সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বম্ভর বসু বলেছেন “এতে করে রাজ্য সরকারের প্রতি মাসে প্রায় ৫২ কোটি টাকা বেঁচে যাবে। আমার সংগঠন এবং সংগঠনের রেশন ডিলারদের মত সরকারের এই আর্থিক পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকারকে এই দুয়ারে রেশনের অতিরিক্ত অর্থ বাঁচিয়ে সাহায্য করা এবং আমাদের রাজ্য সরকারের পাশে থাকা। দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ সরকার এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে সকলের জন্য বিনা পয়সায় খাদ্য দেশের আর কোন রাজ্যে নেই। আমরা বহুবার কেন্দ্র সরকারকে এই বাংলা মডেল চালু করার প্রস্তাব দিয়েছি। উক্ত অর্থ সরকার তার বিভিন্ন জনমুখী প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ করতে পারবে। রাজ্য সরকারকে ধোকা দিয়ে, ভুল পথে চালিত করে, দুয়ারে রেশন না করেও রেশন দোকান থেকে কিছুটা দূরে অথবা কোন কোন জায়গায় গোডাউন ভাড়া নিয়ে দুয়ারে মুডে অতিরিক্ত কমিশন অসাধু উপায়ে সরকারের থেকে আদায় করা আমাদের সংগঠন এর ঘোর বিরোধী। আমাদের সংগঠনের চিফ অ্যাডভাইজার তথা সংসদ প্রফেসর সৌগত রায়। ওনার মতাদর্শে থেকে আমরা কখনোই রাজ্য সরকারের ক্ষতি করতে পারবো না আর কাউকে করতেও দেবো না। আগামী দিনে উনি আমাদের সমস্ত আন্দোলনে সাথে থাকবেন কথা দিয়েছেন। আমরা অতিরিক্ত কমিশনের জন্য কেন্দ্রের কাছে দরবার করব, রেশন ডিলারদের মাসিক আয় ৫০ হাজার টাকা সুনিশ্চিত করার দাবি আমরা ইতিমধ্যে জানিয়ে এসেছি, আগামী দিনেও জানাবো।
এছাড়াও রেশন ব্যবস্থায় রেশন ডিলারদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি করার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রচেষ্টা নেওয়া হচ্ছে”। অর্থনৈতিকবিদ এবং বিশেষজ্ঞ মহল মনে করছেন রেশন ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনতে গেলে সর্বপ্রথম রেশন ডিলারদের স্বার্থ রক্ষা করতে হবে তাদের নিরাপত্তা, রেশন ডিলারদের অভিযোগ ও সমাধান করা,সময় অনুযায়ী মাসিক নির্দিষ্ট আয় সুনিশ্চিত করতে হবে। এরপর ২০১৩ সালের পাবলিক ডিস্ট্রিবিউশনের যে কন্ট্রোল অর্ডার আছে তা আবার নতুন করে রেশন ডিলারদের সাথে নিয়ে ও প্রযুক্তিবিদ দের সাথে নিয়ে নতুন আইন গঠন করতে হবে। খাদ্য দপ্তরের প্রতিটি অফিসে অর্থাৎ জেলা অফিস মহকুমা অফিস ও ব্লক অফিসে প্রতিবছর অডিট করতে হবে। রেশনের আটা নিয়ে প্রায় সবগ্রাহকই কমবেশি অভিযোগ করে আটার গুণগত মান খুবই খারাপ থাকে এবং আটাতে ভেজাল দেয়াও বেশি সম্ভব তাই আটার পরিবর্তে গমের প্রচলন করতে হবে।এখনো পর্যন্ত রাজ্য সরকার এবং রেশন ডিলারদের মধ্যে রেশন দোকান পরিচালনা করতে যে যে সমস্যা আছে সে বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তা সমাধান করে আইনের রূপ দিতে হবে। প্রতিটি রেশন ডিলারের সমস্যার কথা দপ্তরকে আন্তরিকভাবে শুনে তা অতি দ্রুত সমাধান করতে হবে, দেশের সমস্ত রেশন কার্ডের সাথে আধার নাম্বার লিঙ্ক করা অতি দ্রুত প্রয়োজন, কোন ব্যক্তির আধার কার্ড না থাকলে রাজ্য এবং কেন্দ্র সরকারকে উদ্যোগ নিয়ে উক্ত ব্যক্তির আধার কার্ড করে দিতে হবে এই বিষয়ে প্রতিটি রেশন দোকানকে আধার কেন্দ্রের রূপদান করলে ভালো হয়। পুরানো সমস্ত রেশন কার্ড বন্ধ করে প্রতিটি পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা দেখে সার্ভে করে আধার কার্ডের তথ্য অনুযায়ী নতুন রেশন কার্ড পুনরায় সঠিকভাবে বন্টন করতে হবে। এছাড়া এফসিআই থেকে রেশন দ্রব্য সরাসরি রেশন দোকানে পৌঁছাবার পরিকল্পনা রাখতে হবে মাঝে কোন মধ্যসত্ত্বাভোগীদের রাখা চলবে না, তাতে করে সরকারি রেশন দ্রব্যের গুণগত মান ও পরিমাণ অনেকটাই ঠিক রাখা সম্ভব হবে তবেই রেশন ব্যবস্থা ও খাদ্য দপ্তরে স্বচ্ছতা আসবে এবং রাজ্য সরকারের আর্থিক অপচয় বন্ধ হবে।