কোটি কোটি টাকা উদ্ধারের ঘটনায় ভিনরাজ্য থেকে গ্রেফতার ‘পান্ডে ব্রাদার্স’ !

Read Time:5 Minute

২৪ আওয়ার্স টিভি ওয়েব ডেস্ক : এবার পুলিশের জালে ধরা পড়ল পান্ডে ব্রাদার্স। সম্প্রতি শিবপুরে ব্যবসায়ীর গাড়ি এবং তারপরে ফ্ল্যাট থেকে কোটি কোটি টাকা নগদ উদ্ধার হয়েছিল । নাম উঠে এসেছিল তিন ভাইয়ের। কিন্তু বাড়ি-গাড়ির মালিকরা পলাতক ছিলেন। অবশেষে সেই তিনজনকে গ্রেফতার করা হল। গুজরাত ও ওড়িশায় একযোগে অভিযান চালিয়ে মোট চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, ব্যবসায়ী শৈলেশ পাণ্ডে ও তাঁর ২ ভাই অরবিন্দ ও রোহিত পাণ্ডে সহ ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে গুজরাত ও ওড়িশা থেকে। ধৃতদের ট্রানজিট রিমান্ডে নিয়ে আসা হচ্ছে কলকাতায়। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশের অনুমান, বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন সংক্রান্ত অনলাইন কোর্সের নামে বিপুল অঙ্কের টাকা ট্রান্সফার করা হয়েছে।

হাওড়ায় ব্যবসায়ী ও পেশায় চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট শৈলেশ পাণ্ডের ফ্ল্যাট, গাড়ি ও অ্যাকাউন্ট থেকে উদ্ধার হয়েছিল কোটি কোটি টাকা। পুলিশ সূত্রে খবর, সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গিয়েছিল, পুলিশের অভিযানের কিছুক্ষণ আগে কয়েকটি ব্যাগ গাড়িতে তুলে পালিয়ে যাচ্ছেন শৈলেশের ভাই অরবিন্দ ও তাঁর মা। আর এখানেই প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশি অভিযানের খবর কি তাঁরা আগেই পেয়ে গিয়েছিলেন। শিবপুরের মন্দিরতলায় টাকার পাহাড়ের হদিশ মিলেছিল। নগদে ৮ কোটি ১৫ লক্ষ ছাড়াও দুটি ফ্রিজ করা অ্যাকাউন্টে আরও ২০ কোটি টাকা পাওয়া যায় বলে খবর। শিবপুরের অভিজাত আবাসন ক্লাব টাউন রিভারডেলে ব্যবসায়ী ও পেশায় চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট শৈলেশ পাণ্ডের গাড়ি থেকে নগদ ২ কোটি ২০ লক্ষ টাকা উদ্ধার হয়েছিল। ওই রাতেই মন্দিরতলায় ব্যবসায়ীর আরও একটি ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালিয়ে নগদ ৫ কোটি ৯৫ লক্ষ টাকা উদ্ধার করে কলকাতা পুলিশ।

তদন্তকারীদের অনুমান, এই বিপুল পরিমাণ টাকা এসেছিল বিদেশ থেকেই। তাঁদের ধারণা, কালো টাকা সাদা করতে বিভিন্ন ব্যাঙ্কে ভুয়ো অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছিল। আর শৈলেশ পাণ্ডেই ছিলেন সেই সমস্ত অ্যাকাউন্টের ইনট্রোডিউসার। মূলত তাঁর মাধ্যমেই চলত কালো টাকা সাদা করার কারবার, অনুমান পুলিশের। বক্স খাটের মধ্যে লুকিয়ে রাখা আটটি ব্যাগের মধ্যে ছিল টাকা। উদ্ধার হয় প্রচুর সোনার গয়না। রহস্যজনক লেনদেন নিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের করা অভিযোগের ভিত্তিতে এই বিপুল পরিমাণ টাকা উদ্ধার করে কলকাতা পুলিশ। তখন থেকেই পলাতক ছিলেন ব্যবসায়ী শৈলেশ পাণ্ডে ও তাঁর পরিবার। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, হাওড়ায় ব্যবসায়ীর ১৭টি অ্যাকাউন্ট থেকে ৫৭ কোটির লেনদেন হয়েছে। আরও অজস্র অ্যাকাউন্ট থেকে ৭৭ কোটির লেনদেনের হদিশ মিলেছে। এর মধ্যে শুধু সেপ্টেম্বরেই ৭৭ কোটির লেনদেন হয়েছে। তার আগে ৫৭ কোটির লেনদেন হয়। ওই অ্য়াকাউন্টগুলির লেনদেনের উপর নজরদারি চালিয়ে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। তদন্তে আরও একটি বিষয় উঠে এসেছে, তা হল, স্ট্র্যান্ড রোডের ঠিকানা দেখিয়ে এর আগে কানাড়া ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছিল।

এই কোটি কোটি টাকার উৎস কী, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এখনও পর্যন্ত তদন্তকারীরা যে তথ্য হাতে পেয়েছেন, সেই অনুযায়ী, অনলাইন মাধ্য়মে চিটফান্ড কারবার চলছিল। সেই সংক্রান্ত একটি অ্যাপের হদিশও মিলেছে। আমেরিকা বলে দেখানো হলেও আদতে সেটি নাইজিরিয়া থেকে চালানো হত বলে জানা গিয়েছে। ওই অ্যাপটি কে ডেভেলপ করল, কোথা থেকে পরিচালনা হত, সেটি ডাউনলোডের বিধিনিয়ম কী, সেই সংক্রান্ত বিশদ তথ্য হাতে পেতে গুগল-কে চিঠি দিয়েছে কলকাতা পুলিশ। একই সঙ্গে এই ঘটনায় নেপাল সংযোগও উঠে আসছে। জানা যাচ্ছে, অ্যাপটির প্রচারে বহু মানুষকে ফোন করা হয়। সেই ফোনগুলি মূলত নেপাল থেকেই এসেছিল। তাই এই টাকা উদ্ধারের ঘটনায় আন্তর্জাতিক চক্রের সংযোগ রয়েছে বলেও মনে করছে পুলিশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *