
ফিরে দেখা ২০২২ ; ফ্ল্যাশব্যাকে ক্রীড়া জগৎ
২৪ আওয়ার্স টিভি, ওয়েব ডেস্ক : ঘড়ির কাঁটা ঘোরার সাথে সাথে পেরোতে থাকে সময়। সেকেন্ড-মিনিট-ঘন্টার হিসাব রূপান্তরিত হয় দিন-মাস-বছরে। সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের সাথে পাল্লা দিয়ে শেষের পথে আরো একটি বছর। অপেক্ষা ২০২২ পেরিয়ে ২০২৩ সালের। ক্রীড়া জগতে ২০২২ সাল যেন বসিয়েছিল নানা রং এর পসরা। বছরব্যাপী নানা টুর্নামেন্ট নিয়ে ব্যস্ত সময় কেঁটেছে ক্রীড়াবিদদের। ক্রিকেট, ফুটবল, টেনিস, অ্যাথলেটিকস- ভিন্ন ভিন্ন প্রতিযোগিতার রঙে রঙিন হয়ে উঠেছিলো বিশ্ব।

1) আইপিএল : এবছর নয়া নজির গড়ল আইপিএল। আইপিএলের মিডিয়া স্বত্ত্ব বাবদ বিসিসিআইয়ের রোজগার ৪৮ হাজার ৩৯০.৫২ কোটি টাকা। অর্থাৎ ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগকে টপকে আইপিএল বিশ্বের দ্বিতীয় সবচেয়ে দামি ক্রীড়া প্রতিযোগিতার স্বীকৃতি পেয়ে গিয়েছে এই বছর। আরও চমকপ্রদ বিষয় হল, এই প্রথমবার আইপিএলের টেলিভিশন স্বত্ত্বের থেকে বেশি দামে বিক্রি হয়েছে ডিজিটাল স্বত্ত্ব। বোর্ড সচিব জয় শাহ জানিয়েছেন, এই বিপুল অঙ্কের অর্থ দিয়ে বোর্ড ঘরোয়া ক্রিকেটের উন্নতিতে কাজে লাগাবে। এদিকে বছরশেষে অনুষ্ঠিত আইপিএল মিনি নিলামে দেখা গিয়েছে একাধিক চমক। সবথেকে বেশি দামে বিক্রি হন স্যাম কুরান। ইংল্যান্ডের এই ক্রিকেটারের দাম উঠেছে ১৮ কোটি ৫০ লক্ষ। যা এখনও পর্যন্ত আইপিএলের ইতিহাসে সর্বকালীন রেকর্ড। এদিকে বাংলার পেসার মুকেশ কুমারকে সাড়ে ৫ কোটি টাকায় কিনেছে দিল্লি ক্যাপিটালস। এটাও নজির। এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি দাম পাওয়া বাংলার ক্রিকেটার তিনিই।

2) মেসির স্বপ্নপূরণ করে আর্জেন্টিনার বিশ্বজয় : বছরের শেষে কাতারে বসেছিল বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ও জনপ্রিয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতা- ফুটবল বিশ্বকাপ। ব্রাজিল, ফ্রান্সের মতো শক্তিশালী দলই বাজিমাত করবে ধারণা ছিল ফুটবল পণ্ডিতদের। কিন্তু সব হিসেব উলটে দেয় আর্জেন্টিনা। শুরুতে সৌদি আরবের কাছে হারলেও মেসিরা লক্ষ্যে পৌঁছে যান অসামান্য ধারাবাহিকতা দেখিয়ে। দলের নিউক্লিয়াস ছিলেন অবশ্যই লিওনেল মেসি। কেবল গোল করাই নয়, প্রতিটি ম্যাচেই গেম মেকার হিসেবে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব নতুন করে বুঝিয়ে দেন এলএম১০। শেষ পর্যন্ত ফ্রান্সকে হারিয়ে কাপ জেতেন মেসিরা। মেসি পান সোনার বল। দুর্দান্ত খেলে গোল্ডেন গ্লাভস জেতেন আর্জেন্টেনীয় গোলকিপার এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। সেরা তরুণ ফুটবলারের পুরস্কার জেতেন আর্জেন্তিনার এনজো ফার্নান্ডেজ। সোনার বুট পান ফরাসি স্ট্রাইকার কিলিয়ান এমবাপে।

3) বিরাটের প্রত্যাবর্তন : এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপে ভরাডুবি হলেও ওই দুই টুর্নামেন্টেই দুর্দান্ত ব্যাট করেছিলেন তিনি । বিশেষ করে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ম্যাচ জেতানো ৮২ রানের ইনিংসটি সকলের মন জিতে নেয়। তার আগে এশিয়া কাপে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে শতরান করে দীর্ঘদিনের খরাও কাটান ‘কিং’। এশিয়া কাপের ম্যাচের ওই ইনিংসের ফলে ১০৯৭ দিন পর তিন অঙ্কের রান পান তিনি। পরে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচেও শতরান পান কোহলি। যদিও টেস্টে তাঁর খারাপ ফর্ম অব্যাহতই রয়েছে।

4) বোর্ডের প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সৌরভের সরে যাওয়া : বিসিসিআইতে সৌরভ জমানা শেষ হল এবছরই। বোর্ডের বার্ষিক সাধারণ সভায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নতুন সভাপতি নির্বাচিত হলেন রজার বিনি। তার আগে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে কার্যত সরে যেতে বাধ্য হন ‘দাদা’। প্রাথমিক গুঞ্জন শোনা যায় আইসিসি চেয়ারম্যানের পদে মনোনয়ন জমা দেওয়া হতে পারে সৌরভের নাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাও হয়নি।

5) কমনওয়েলথে ভারতের সাফল্য : এবারের কমনওয়েলথ গেমসে অসাধারণ সাফল্য পেয়েছেন ভারতীয় অ্যাথলিটরা। সব মিলিয়ে ২২টি সোনা, ১৬টি রুপো ও ২৩টি ব্রোঞ্জ জিতেছে ভারত। ৬১টি পদক জিতে তালিকায় চার নম্বরে শেষ করেছে ভারত। লন বল, হাই জাম্প-সহ একাধিক খেলায় প্রথম পদক এসেছে। কমনওয়েলথে এটাই ভারতের তৃতীয় সেরা পারফরম্যান্স। পাশাপাশি নীরজ চোপড়ার সোনালি সাফল্য এবছরও অব্যাহত থেকেছে। বিশ্ব অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে রুপোর পদক জেতার পাশাপাশি ডায়মন্ড লিগে চ্যাম্পিয়ন হন তিনি। ২০০৩ সালে অঞ্জু ববি জর্জের পর এই প্রথম বিশ্ব অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে পদক পেলেন কোনও ভারতীয়। ডায়মন্ড লিগেও এই প্রথম জয়ী হলেন কোনও ভারতীয়।

6) থমাস কাপে ভারতের সাফল্য : ব্যাডমিন্টনের দিক থেকেও বছরটা দারুণ গিয়েছে ভারতের। ইন্দোনেশিয়াকে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে প্রথমবারের জন্য থমাস কাপ জেতে ভারত। যেসব শাটলাররা থমাস কাপে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন তাঁরা হলেন লক্ষ্য সেন, কিদম্বি শ্রীকান্ত, চিরাগ শেঠি এবং সাত্ত্বিক সাইরাজ। প্রথম গেমে অ্যান্টনি গিনটিংকে পরাজিত করেন লক্ষ্য সেন। এরপর ডাবলসে এহসান-সুকামালজোকে পরাজিত করে সাত্ত্বিক-চিরাগ জুটি। তৃতীয় গেমে জোনাথন ক্রিস্টিকে পরাজিত করেন কিদম্বি শ্রীকান্ত। ভারতের এই জয়ে নতুন করে আশা দেখতে শুরু করেছে ব্যাডমিন্টন অনুরাগীরা।

7) নীরজ চোপড়ার সাফল্য : নীরজ চোপড়ার জন্য দারুণ গিয়েছে এই বছর। স্টকহোম ডায়মন্ড লিগে নিজের জাতীয় রেকর্ড ভেঙে রুপোর পদক জেতেন তিনি। এরপর বিশ্ব অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপেও ৮৮.১৩ মিটার থ্রোয়ে রূপো জেতেন। অঞ্জু ববি জর্জের পর তিনি দ্বিতীয় ভারতীয় হিসেবে পদক জেতেন। তবে চোটের কারণে কমনওয়েলথ গেমসে অংশ নিতে পারেননি তিনি। তা না হলে আরও একটি পদক নিশ্চিত ছিল ভারতের।

8) ঝুলন-মিতালির অবসরে যুগাবসান : ভারতীয় মহিলা ক্রিকেটকে তাঁরা দিয়েছেন অনেক। প্রেরণা জুগিয়েছেন অনেককে। সেই মিতালি রাজ ও ঝুলন গোস্বামীর অবসরে ভারতীয় মহিলা ক্রিকেটের এক সোনালি যুগ কার্যত শেষ হল। গত জুন মাসে অবসর ঘোষণা করেন মিতালি। এরপর অবসর ঘোষণা করেন ঝুলনও। লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচের শেষেই বিদায় জানালেন তিনি।