
শত প্রতিকূলতার মধ্যেও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে সেই বৃদ্ধ বটবৃক্ষ
সুদেষ্ণা দত্ত : 24Hrs Tv ওয়েব ডেস্ক : সারা পৃথিবী জুড়ে চলছে আবহাওয়ার বদল জলবায়ু পরিবর্তন। বিজ্ঞানীদের কপালে এখন চিন্তার ভাঁজ। সৌরজগতের সবচেয়ে সুন্দর এই নীল- সবুজ গ্রহের অবস্থা খুবই করুণ। একদিকে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির ফল অন্যদিকে বিশ্ব উষ্ণায়ন। আর তার ফল স্বরূপ বরফ গলছে, সমুদ্রের জলস্তর বাড়ছে, কোথাও অতিবৃষ্টি তো কোথাও অনাবৃষ্টি। বন্যা, খরা, ভূমিকম্প, সুনামি — এ যেন প্রকৃতির এক ভয়াবহ চিত্র। আবহাওয়াবিদদের মতে বিশ্বজুড়ে উষ্ণতা যেভাবে বাড়ছে তাতে বছর পাঁচেক বাদে পৃথিবীতে খাদ্যাভাব দেখা দেবে। বহু বন্যপ্রাণীর বিলুপ্তি ঘটবে। ইতিমধ্যেই উষ্ণতার কারণে বিশ্বজুড়ে গরমে মানুষের মৃত্যুর ঘটনা বেড়েই চলেছে। তবে এত কিছুর পরেও পরিবেশের সব প্রতিকূলতাকে কাটিয়ে নানা ঘটনা দুর্ঘটনার সাক্ষী স্বরূপ আজও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে এক বৃদ্ধ বটগাছ। আড়াইশো বছরের বেশি সময় ধরে এশিয়ার সবচেয়ে সর্ববৃহৎ ও সর্ব বিস্তৃত এই বৃক্ষ এখন নিজেই এক অরণ্য। তার কোলে আশ্রয় নিয়েছে কতশত নানা ধরনের পাখি আর ছোট থেকে মাঝারি নানা জীবজন্তু। তবে কালে কালে বয়সের ভারে নানা ধরনের রোগ ও বাসা বেঁধেছে তার শরীরে। মূল বৃক্ষের অংশটি এখন হারিয়ে গেছে। তার গা থেকে নেমে আসা ঝুড়িগুলো দিয়েই তৈরি হয়েছে এক বিশাল অরণ্য যা আজও বাগানের মধ্যমণি। ১৯৮৫ সালে গিনিস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড করে এই বটবৃক্ষ। তবে নানা ঘাত প্রতিঘাতের মধ্যে দূষিত পরিবেশে এখন এই গার্ডেনের বহু গাছের ক্ষতি হচ্ছে। আয়লা থেকে আমফান বড় বড় সাইক্লোন গুলোর জন্য বহু গাছ পড়ে গেছে। এই বৃদ্ধ বটবৃক্ষের গায়েও ঘুন ধরেছে। তবে উদ্যান বিভাগের কর্তৃপক্ষের তদারকিতে এখন অনেকটাই ভালো আছে। রক্ষণাবেক্ষণের পাশাপাশি এখানে নানা ধরনের প্রজাতির গাছপালা দিয়ে ছোট ছোট নানা রকমের বাগান সাজানো হয়েছে। এখানকার রোজগার্ডেনটি অর্থাৎ গোলাপ বাগান টি দেখার মতন। সম্প্রতি নানা ধরনের গাছ দিয়ে তৈরি ভুলভুলাইয়া উদ্বোধন করা হয়েছে। এখানকার স্নিগ্ধ মনোরম পরিবেশ বহু মানুষকে এই জায়গায় বেড়াতে আসার জন্য টানে। এছাড়া এখানে ২৬ টি বড় বড় লেক রয়েছে। অনেক জায়গায় সুন্দর সুন্দর গাছের পাশাপাশি রয়েছে তালসারী, নানা ধরনের গুল্ম জাতীয় গাছ। এখানে আর একটা আকর্ষণীয় জিনিস হলো আফ্রিকার জায়েন্ট ওয়াটার লিলি ফুলের পাতা। দেখলে অবাক লাগে।

হ্যাঁ, অনেকেই হয়তো চিনতে পেরেছেন আমি কার কথা বলছি। হুগলি নদীর তীরে কলকাতার মেটিয়াবুরুজ অঞ্চলের ঠিক বিপরীতে হাওড়া শিবপুরে অবস্থিত বোটানিক্যাল গার্ডেনের কথাই বলছি। ১৭৮৭ সালে রবার্ট কিড নামে এক ইংরেজ সেনা আধিকারিক এটির প্রতিষ্ঠাতা। প্রায় ২৭৩ একর বিস্তৃত এই গার্ডেনে প্রায় 1400 প্রজাতির, সতেরো হাজার গাছ আছে। হুগলি নদীর তীরে রয়েল ইন্ডিয়ান বোটানিক্যাল গার্ডেনের নামটি ২০০৯ সালে পরিবর্তিত হয়ে আচার্য জগদীশচন্দ্র বোস ইন্ডিয়ান বোটানিক গার্ডেন নামেই এখন পরিচিত। তবে সাধারণত মানুষ একে বি গাডেন নামেই চেনে।এখানে সারা বছরই দেশ বিদেশের পর্যটকের ভিড় লেগে রয়েছে। উদ্ভিদবিদ্যা নিয়ে যারা গবেষণা করেন সেই সব পড়ুয়ারা আসেন এখানে পড়তে। নিরাপত্তার কারণে এখন বটবৃক্ষের অরণ্যটিকে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তার কারণে গার্ডেনের বিভিন্ন অংশকে ঘিরে রাখা হয়েছে, নিরাপত্তা রক্ষী বাড়ানো হয়েছে। সম্প্রতি ১০ হাজার নতুন চারা গাছ পোতা হয়েছে এখানে। তবে যেভাবে ক্রমশ বড় বড় ইমারত, কংক্রিটের জঙ্গল আমাদের সুস্থ পরিবেশকে ঘিরে ফেলছে ,মাঝে মাঝে ভয় হয় এ এন হাওড়া শহরের বুকে এই প্রাচীন উদ্যানটি আজও যেভাবে ফুসফুসের কাজ করে আসছে সেটি আগামী দিনে অক্ষুণ্য থাকবে তো? সম্প্রতি সারা বিশ্ব জুড়ে যেভাবে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা শুরু হয়েছে তার ফলে পরিবেশের দূষণ যেভাবে দিন দিন বেড়েই চলেছে। এই বিষ বাষ্পে উদ্ভিদ কুল থেকে জীব কুল হয়তো কোন কিছুই বুঝিয়া রেহাই পাবে না ভবিষ্যতে।মাটির উর্বরতা শক্তি কমে যাওয়ার কারণে বহু গাছ নিজেকে ধরে রাখতে পারছে না, নষ্ট হচ্ছে ঔষধি গাছের গুনাগুন। তাই আমরা চাই, শত প্রতিকূলতার মধ্যেও আচার্য জগদীশচন্দ্র বোস ইন্ডিয়ান বোটানিক গার্ডেন তার গরীমাকে অক্ষুণ্ণ রাখুক।