
আবার কি ছন্দা গায়েনের পরিণতি? নিখোঁজ কলকাতার চার পর্বতারোহী, চিন্তায় পরিবার
টুয়েন্টি ফোর আওয়ার্স টিভি ওয়েব ডেস্ক: ফের একবার ছন্দা গায়েন কাণ্ডের ছায়া! হিমাচল প্রদেশের মাউন্ট আলি রত্নি টিব্বা অভিযানে গিয়ে নিখোঁজ কলকাতার চার পর্বতারোহী। নিখোঁজ পর্বতারোহীদের নাম দিবস দাস, অভিজিৎ বণিক, চিন্ময় মণ্ডল এবং বিনয় দাস। গত ৭ সেপ্টেম্বর থেকে তাঁদের কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে হিমাচল প্রদেশ প্রশাসন। কুলুর মাউন্ট আলি রত্নি টিব্বা শৃঙ্গ জয় করতে বেরিয়েছিলেন পর্বতারোহীদের ওই দলটি। মালানা গ্রাম থেকে শুরু হয়েছিল তাঁদের যাত্রা। বুধবারের আগেই তাঁরা পৌঁছে গিয়েছিলেন ‘অ্যাডভান্সড’ বেস ক্যাম্পে। সেখান থেকে তাঁরা মূল শৃঙ্গের উদ্দেশে রওনা হন। কিন্তু সময় পেরিয়ে গেলেও ফিরে না এলে দলটির জন্য অপেক্ষারত শেরপা ঘটনাটি জানান স্থানীয় প্রশাসনকে। শুক্রবার ওই পর্বতারোহীদের খোঁজে একটি উদ্ধারকারী দল রওনা হয়েছে আলি রত্নি টিব্বায়।
গত ৮ অগস্ট কলকাতা থেকে রওনা দিয়েছিলেন বাংলার এই পর্বতারোহী। এরপর ২২ অগস্ট মানালি থেকে যাত্রা শুরু করেন এই চারজন। ২২ অগস্ট তাঁদের অবস্থান ছিল জারি ও ফোর্থ ব্রিজে। ২৩ অগস্ট ৩৬০০ মিটারে থাকা ফোর্থ ব্রিজ থেকে বেস ক্যাম্প ছিলেন চার পর্বতারোহী। সেখান থেকে অনেকটা উপরে গিয়ে গত ১ সেপ্টেম্বর ফের বেস ক্যাম্পে নেমে আসেন ওঁরা। সেখান থেকে ৩ সেপ্টেম্বর ৪৭০০ মিটার উচ্চতায় থাকা সামিট ক্যাম্পে পা রাখেন অভিজিৎ বণিক, চিন্ময় মণ্ডলরা। ৪ সেপ্টেম্বর চারজন সামিট ক্যাম্পেই বিশ্রাম নিয়েছিলেন। সেই পর্ব মিটিয়ে ৫ ও ৬ সেপ্টেম্বর ওঁরা ফের যাত্রা শুরু করেন। কিন্তু গত ৭ সেপ্টেম্বর থেকে দিবস দাস, বিনয় দাসদের আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
এই বিষয়ে এভারেস্ট জয়ী দেবরাজ দত্ত বলেন, ‘শুক্রবার রাতে আমি খবরটা পেয়েছিলেন। সেই দলের দুই সহকারী ও একজন কুক আমাকে এই খবরটা জানায়। ওঁরা মানালা গ্রামের কাছে এসে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে। এবং কোনও বার্তা না পেয়ে আমাকে খবর দেয়। ওঁরা বলে গত ৭ সেপ্টেম্বর ভোর ৫টা নাগাদ সামিট ক্যাম্পের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। ওঁরা শেরপা ছাড়াই সামিট ক্যাম্পে চলে যায়। শেরপার কথা অনুসারে সামিট ক্যাম্পে রওনা দেওয়ার কিছুক্ষণ পর চারজন নিখোঁজ হয়ে যায়। সেই শেরপা চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু দুপুর ১২টা পর্যন্ত ওঁদের কোনও খবর না পাওয়ার জন্য সেই শেরপা বেস ক্যাম্পে ফিরে আসে।’
এই নিখোঁজ চার পর্বতারোহীকে ফিরিয়ে আনার জন্য যাবতীয় উদ্যোগ নিয়েছেন দেবরাজ দত্ত। তিনি হিমাচল প্রদেশ সরকার এবং ইন্দো-টিবেটান পুলিসের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলেছেন। কিন্তু দুপুর গড়ালেই দৃশ্যমানতা কমে যাচ্ছে। ফলে উদ্ধারকার্যে ঘটছে ব্যাঘাত। ৫৪৫৮ মিটার উঁচু মানালির ওই শৃঙ্গটি অন্যান্য শৃঙ্গ থেকে খর্বকায় হলেও শেষ ৪০০ মিটার অন্যান্য অনেক শৃঙ্গ থেকে অনেক বেশি দুর্গম। এমনটাই মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল। টিব্বার শৃঙ্গের পথ বেশ পাথুরে এবং অত্যন্ত খাড়াই। চার পাশে হিমবাহ থাকায় বেশ ঝুঁকিপূর্ণও। তাই পর্বতারোহীদের মতে, এই শৃঙ্গ জয় করতে গেলে অনেক বেশি প্রযুক্তি নির্ভর এবং পেশাদার প্রশিক্ষণ নির্ভর হতে হয়। ফলে ঝুঁকির রাস্তায় দুর্ঘটনার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিতে পারছে না প্রশাসন।
এ দিকে কুলুর জেলাশাসক বিকাশ শুক্লা জানিয়েছেন, বেস ক্যাম্পে থাকা শেরপা এবং ওই দলের অন্য দুই সদস্যদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পর্বতারোহীদের খোঁজে মানালির অটল বিহারী মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউট থেকে একটি দল রওনা হয়েছে। তবে যেহেতু এলাকাটি বিশাল এবং সেখানে পৌঁছতেও অনেকখানি সময় লাগবে, তাই খবর পেতে কিছু সময় লাগবে বলে মনে করছেন তিনি। কুলু প্রশাসন অবশ্য আশ্বস্ত করে জানিয়েছে উদ্ধারকারীদের হাতে স্যাটেলাইট ফোন রয়েছে, যাতে তাঁরা সহজেই উদ্ধারকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।