খবরে থাকার জন্য একের পর এক নৃশংস খুন, পড়ে নিন এই বিটিকে সিরিয়াল কিলারের কাহিনী

টুয়েন্টি ফোর আওয়ার্স টিভি, সৌম্যজ্যোতি মন্ডল :
বিটিকে কিলার’। এক সময় এই নাম শুনলেই ভয়ে কাঁপত আমেরিকার পিটস্‌বুর্গের উইচিটা এবং উইচিটা সংলগ্ন এলাকার মানুষ। ‘বিটিকে কিলার’-এর আসল নাম ডেনিস রেডার। তিন দশক ধরে মোট ১০ জনকে নৃশংস ভাবে খুন করেছিল ডেনিস।
বিটিকে-র পুরো অর্থ ছিল, ‘বাইন্ড, টর্চার অ্যান্ড কিল’ (অর্থাৎ বেঁধে রাখো, অত্যাচার করো এবং মেরে ফেলো)। ডেনিস নিজেকে বিটিকে খুনি বলত, কারণ সে তার শিকারদের বেঁধে, নির্যাতন করে নির্মম ভাবে খুন করত।
কিন্তু তার এই অপরাধের পিছনের কারণ কী? কী কারণেই বা ইতিহাসের অন্যতম ভয়ঙ্কর সিরিয়াল কিলারের তালিকায় নাম তুলল সে?
১৯৪৫-এর ৯ মার্চ আমেরিকার কানসাসের উইচিটায় জন্ম ডেনিসের। ১৯৬০-এর দশকে সে আমেরিকার বায়ুসেনায় যোগ দেয়। ১৯৭০ সাল নাগাদ সে বায়ুসেনার চাকরি ছেড়ে উইচিটাতে ফিরে আসে। উইচিটা ফিরে সে বিয়ে করে। দু’টি সন্তানও হয় তার। এর পর ডেনিস কিছু দিন ক্যাম্পিং করার সরঞ্জাম প্রস্তুতকারী কোলম্যান কোম্পানির কারখানায় কাজ শুরু করে। এই সময় সে একাধিক বার চাকরি বদলেছিল।
১৯৪৫-এর ৯ মার্চ আমেরিকার কানসাসের উইচিটায় জন্ম ডেনিসের। ১৯৬০-এর দশকে সে আমেরিকার বায়ুসেনায় যোগ দেয়। ১৯৭০ সাল নাগাদ সে বায়ুসেনার চাকরি ছেড়ে উইচিটাতে ফিরে আসে। উইচিটা ফিরে সে বিয়ে করে। দু’টি সন্তানও হয় তার। এর পর ডেনিস কিছু দিন ক্যাম্পিং করার সরঞ্জাম প্রস্তুতকারী কোলম্যান কোম্পানির কারখানায় কাজ শুরু করে। এই সময় সে একাধিক বার চাকরি বদলেছিল।
১৯৭৯ সালে ডেনিস ‘উইচিটা স্টেট ইউনিভার্সিটি’ থেকে স্নাতক হয়। বিষয় ছিল ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থা। এর পর সে নিরাপত্তারক্ষীদের একটি সংস্থায় কাজ শুরু করে।
এক জন ধার্মিক মানুষ হিসাবেই এলাকায় পরিচিত ছিল ডেনিস। নিয়মিত গির্জায় যাতায়াত ছিল তার। কিন্তু এরই মধ্যে ডেনিস তার প্রথম খুন করে ফেলেছে।
১৯৭৪ সালের ১৫ জানুয়ারি ডেনিস প্রথম খুন করে। উইচিটাতেই দুই শিশু-সহ এক পরিবারের চার সদস্যকে শ্বাসরোধ করে খুন করে ডেনিস। ওই পরিবারের গৃহকর্ত্রী এক সময় ডেনিসের সঙ্গে কাজ করতেন।
ঘটনাস্থলে বীর্য পাওয়া গেলেও মৃতদের মধ্যে কেউই যৌন নির্যাতনের শিকার হননি বলেও ময়নাতদন্তে উঠে আসে। ডেনিস এই পরিবারের সকলকে খুনের পর সেখান থেকে একটি ঘড়ি এবং কিছু অন্তর্বাস চুরি করে। পরে জানা যায়, স্রেফ স্মারক হিসাবে এই জিনিসগুলি সে চুরি করেছিল।

১৯৭৪ সালের এপ্রিলে ডেনিস ২১ বছর বয়সি আরও এক তরুণীকে খুন করে। ওই তরুণীও এক সময় ডেনিসের সঙ্গে একই সংস্থায় কাজ করতেন।

ওই তরুণীর ভাই ডেনিসকে আটকানোর চেষ্টা করে। কিন্তু ডেনিস তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালানোর পর সে পালিয়ে যায়। এর পর তরুণীকে বার বার ছুরির আঘাতে খুন করে ডেনিস। কিন্তু এই খুনের পরও পুলিশের হাতে ধরা পড়েনি সে।
প্রথম দু’টি খুনের ঘটনাস্থলেই মৃতদের শরীরের পাশে একটি হাতে আঁকা ছবি খুঁজে পায় পুলিশ। প্রাথমিক ভাবে এই আঁকিবুঁকি দেখে মহিলার ছবি মনে হলেও পুলিশ ছবি ঘুরিয়ে দেখতে পায় এতে ‘বিটিকে’ লেখা রয়েছে।
ডেনিসের এতগুলি খুনের পিছনে আসল কারণ ছিল পরিচিতি পাওয়া এবং সিরিয়াল কিলার হিসাবে নিজের ছাপ রেখে যাওয়া। কিন্তু সংবাদমাধ্যমে তার করা খুনগুলি নিয়ে বিশেষ আলোড়ন তৈরি না হওয়ায় পরের বছর জানুয়ারি মাসে হত্যাকাণ্ডের বিবরণ দিয়ে নিজেই একটি চিঠি লেখে সে। এই চিঠি সে রেখে দেয় উইচিটারের গ্রন্থাগারের একটি বইয়ের মধ্যে। চিঠি হাতে আসতেই উইচিটায় হইচই পড়ে যায়। চিঠিতে লেখা ছিল, ‘আমার পদ্ধতি হল বেঁধে রাখা, নির্যাতন করা এবং তার পর তাদের খুন করা। এই কারণে আমি নিজের নাম ‘বিটিকে কিলার’ রেখেছি।’
১৯৭৭ সালের মার্চ মাসে তিনটি বাচ্চাকে বাথরুমে তালাবদ্ধ করার পরে শ্বাসরোধ করে খুন করে ডেনিস। ওই বছরের ডিসেম্বরে আরও এক মহিলাকে সে খুন করে। তখনও সংবাদমাধ্যমে তার খুনগুলি নিয়ে বিশেষ চর্চা শুরু না হওয়ায় সে বিরক্ত হয়ে ওঠে।
একটি স্থানীয় টিভি চ্যানেলে একটি চিঠি পাঠিয়ে সে লেখে, ‘খবরে নাম তোলার জন্য আমাকে আর কত খুন করতে হবে?’ টিভিতে সেই খবর সম্প্রচারিত হওয়ার পর এলাকা জুড়ে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

পরের আট বছর ডেনিস আর কোনও খুন করেনি। এর পর ১৯৮৫ সালে এক মহিলাকে খুন করে ডেনিস। শোনা যায়, ডেনিস ওই মহিলাকে স্থানীয় গির্জায় নিয়ে গিয়ে খুন করে। গির্জায় দড়ি দিয়ে ওই মহিলাকে বেঁধে তাঁর উপর অত্যাচার করার বেশ কিছু ছবিও তোলে সে।
১৯৮৬ সালে ২৮ বছর বয়সি আরও এক মহিলাকে খুন করে ডেনিস। মহিলার দুই সন্তানের সামনেই তাঁকে খুন করা হয়েছিল। ১৯৯১ সালে ডেনিস ৬২ বছর বয়সি আরও এক বৃদ্ধাকে শ্বাসরোধ করে খুন করে। তবে সেই সময় এই খুনের ঘটনাগুলির কিনারা হয়নি।

২০০৪ সালে প্রথম খুনের ৩০ বছর পর স্থানীয় এক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, উইচিটার খুনি সম্ভবত মারা গিয়েছে বা অন্য কোনও জেলে বন্দি। এই প্রতিবেদন দেখে নড়েচড়ে বসে ডেনিস। নিজের জীবনের নবম খুন সংক্রান্ত বেশি কিছু নথি নিজেই ওই সংবাদমাধ্যমের এক সাংবাদিককে পাঠায় সে। এই নথির মধ্যে ছিল মৃত মহিলার ছবি এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স।
এর পর এক বছর ধরে ওই সংবাদমাধ্যমে খুন সংক্রান্ত আরও বেশ কিছু প্রমাণ পাঠায় ডেনিস। খুনগুলি করার পর মৃতদের বেশ কিছু জিনিস সে স্মারক হিসাবে নিজের কাছে রেখে দিত। আর সেই জিনিসগুলিই ডেনিস বাক্সে ভরে পুলিশ এবং সংবাদমাধ্যমে পাঠাত।
২০০৫ সালের জানুয়ারিতে খুনের যাবতীয় প্রমাণ একটি ফ্লপির মাধ্যমে পুলিশের কাছে পাঠায় ডেনিস। আর এই ফ্লপি পাঠানোই কাল হয় তার।
ফ্লপির সূত্র ধরে ফেব্রুয়ারি মাসে ডেনিসকে গ্রেফতার করে পুলিশ। প্রথম খুনের ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া বীর্যের পরীক্ষা করে প্রমাণিত হয় যে, ডেনিসই খুনি। আদালতে দাঁড়িয়ে ডেনিস সমস্ত অপরাধ স্বীকার করে।
আদালতে ডেনিস জানায়, অল্প বয়সে তার মধ্যে পশুদের হত্যা করার প্রবণতা তৈরি হয়েছিল। ছো়টবেলায় সহিংস যৌন কল্পনাও দানা বাঁধতে থাকে তার মাথায়। আর এ থেকেই একের পর এক খুনের নেশা পেয়ে বসে। বিচারে ডেনিসের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *