লোকসভা নির্বাচনের আগে জল মাপতে চাইছেন নীতীশ কুমার

24HrsTv: নিজস্ব প্রতিনিধি: বিহারের প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, অনগ্রসর (ওবিসি) নেতা কর্পূরী ঠাকুরের জন্মশতবর্ষ কর্মসূচিতে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের মন্তব্য ঘিরে তোলপাড় দেশের রাজনৈতিক মহল। ১৯৭৮ সালে জনতা পার্টির সরকারের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন কর্পূরী প্রথম বিহারে অনগ্রসর শ্রেণির (ওবিসি) জন্য সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। জন্মশতবর্ষে তাকে মরণোত্তর ভারতরত্ন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। এই সিদ্ধান্তের জন্য ভূয়সী প্রশংসা করেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী তথা জেডিইউ প্রধান নীতীশ। পাশাপাশি বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর তাতপর্যপূর্ণ’ মন্তব্য, ‘জেডিইউ নেতৃত্ব কর্পূরী ঠাকুরের দর্শন অনুসরণ করে চলেছেন। পরিবারের কোনও সদস্যকে আমরা রাজনৈতিক ক্ষমতার বৃত্তে নিয়ে আসি না।’

২০২০ সালে বিহারের বিধানসভা ভোটে বিজেপির সঙ্গে লড়ে জিতেছিল জেডিইউ। কিন্তু ২০২২ সালের আগস্টে এনডিএ ছেড়ে বিহারে আরজেডি-কংগ্রেস-বামেদের সমর্থন নিয়ে ‘মহাগঠবন্ধন’ সরকার গড়েছিলেন নীতীশ কুমার। কেন আবার তিনি বিজেপির সঙ্গী হতে চাইছেন? জেডিইউ’র একটি সূত্র জানাচ্ছে, ‘ইন্ডিয়া’ সম্পর্কে মোহভঙ্গ হয়েছে তাঁর। তাই আবার ফিরতে চান এনডিএতে। এ প্রসঙ্গে উঠে আসছে তিনটি ‘কারণ’।প্রথমত, দেশের সব রাজ্যে ঘুরে ঘুরে জোটের পটভূমিকা তৈরি করেছিলেন নীতীশ। জোটের প্রথম বৈঠকও হয়েছিল তাঁরই ব্যবস্থাপনায় পাটনায়। কিন্তু পরে বেঙ্গালুরু, মুম্বই ও দিল্লিতে জোটের বৈঠকে তাঁকে সে ভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। জোটের নাম ‘ইন্ডিয়া’ নিয়েও তাঁর আপত্তিকে অগ্রাহ্য করা হয়। একই সঙ্গে নীতীশ নিজেই বিরোধী জোটের আহ্বায়ক হতে আগ্রহী হলেও কয়েকটি শরিক দলের আপত্তিতে তা কার্যকর হয়নি।

দ্বিতীয়ত, ৭৯ বিধায়কদের দল আরজেডি বেশ কিছু দিন ধরেই মুখ্যমন্ত্রিত্ব ছাড়তে চাপ দিচ্ছে নীতীশকে। জানা যাচ্ছে, লালু প্রসাদ যাদব ন তার পুত্র তথা উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বীকে মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসাতে। নীতীশের দলের বিধায়ক সংখ্যা মাত্র ৪৫। ফলে মুখ্যমন্ত্রী পদে থাকতে হলে বিজেপির ৭৮ বিধায়কের সমর্থন তাঁর প্রয়োজন। নীতীশকে সমর্থনের বিষয়ে বিহারের বিজেপি নেতৃত্বের একাংশের তীব্র আপত্তি রয়েছে। জানা গিয়েছে, লোকসভা নির্বাচনকে ‘পাখির চোখ’ করেছে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহেরা, তাই নীতীশকে পাটনার কুর্সিতে বহাল রাখতে পারেন।

তৃতীয়ত, ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে বিজেপির সঙ্গে জোটে ১৭টি আসনে লড়াই করে ১৬টিতে জয় পেয়েছিলেন নীতীশের জেডিইউ। বিজেপি ১৭টিতে লড়ে সবগুলি এবং প্রয়াত রামবিলাস পাসোয়ানের লোক জনশক্তি পার্টি (এলজেপি) ৬টিতে সবগুলি জিতেছিল। ৪০টি আসনের মধ্যে বিরোধী জোটের এক মাত্র কংগ্রেস একটি আসনে জিতেছিল। লালুর দল খাতা খুলতে পারেনি। স্বাভাবিক ভাবেই নিজেদের দখলে থাকা ১৬টি আসন ছাড়তে চান না নীতীশ। কিন্তু সেই ১৬টির মধ্যে এমন ৪-৫টি আসন রয়েছে, যা দাবি করছে আরজেডি এবং বামেরা!

বিজেপির সঙ্গ ছেড়ে মহাগঠবন্ধনের হাত ধরে ক্ষমতা ধরে রাখলেও ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে বিহারে ক্ষমতা ধরে রাখতে মরিয়া নীতীশ কুমার। তাই রাজনৈতিক অঙ্ক কষে এগোতে চাইছেন। নিজের নতুন অবস্থানে জেডিইউ প্রধান নীতীশ কুমার সমস্ত বিকল্প খুলে রাখতে চাইছেন। ইন্ডিয়া জোটে থাকবেন না এমন কথা সরাসরি বলেননি। আবার লোকসভা নির্বাচনের পরে ফলাফল দেখে সিদ্ধান্ত নেবেন এমন মন্তব্যও আসেনি নীতিশের থেকে। বিজেপির সঙ্গে অর্থাৎ এনডিএ’র সঙ্গে ২৪’র ভোটযুদ্ধে নামবেন এনিয়ে জল্পনার মাঝে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার নীরবে জল মেপে নিচ্ছেন, এমনতাই মত রাজনৈতিক মহলের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *