মমতার আন্দোলনের জন্য টাটা পালিয়েছে! বললেন রবীন্দ্রনাথ, পাল্টা খোঁচা বেচারামের

২৪ আওয়ার্স টিভি ওয়েব ডেস্ক : সিঙ্গুর নিয়ে আবারও সরগরম রাজ্য রাজনীতি। সিঙ্গুর থেকে টাটা গোষ্ঠী চলে গেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ে আন্দোলনের ফলেই। এমনটাই মনে করেন এক সময়ে সেই জমি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকা সিঙ্গুরের ‘মাস্টারমশাই’ রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। প্রসঙ্গত গত বিধানসভা ভোটের আগেই বিজেপিতে যোগ দেন রবীন্দ্রনাথবাবু। তাঁর মন্তব্য নিয়ে এবার কটাক্ষ করল জোড়াফুল শিবির।

বুধবার শিলিগুড়িতে বিজয়া সম্মিলনীর অনুষ্ঠান থেকে মমতা বলেন, ‘আমি টাটাকে তাড়াইনি। সিপিএম তাড়িয়েছে। ওরা জোর করে জমি নিতে গিয়েছিল। আমরা ফিরিয়েছি।’ প্রায় দেড় দশক আগে রাজ্যে ঘটে যাওয়া সেই ঘটনা নিয়ে বৃহস্পতিবার ব্যাখ্যা দেন সিঙ্গুরের রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যকে সমর্থন বা প্রত্যাখ্যান কিছুই না করে যেটা ঘটনা তা উল্লেখ করছি। জমি আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখন তৎকালীন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধীর নেতৃত্বে কৃষক এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মধ্যে একটা বোঝাপড়া হয়েছিল। তখন মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এবং শিল্পমন্ত্রী ছিলেন নিরুপম সেন। অন্যদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমরাও ছিলাম। তখন এই রকম ঠিক হয়েছিল যে, স্বেচ্ছায় যত জমি কৃষকরা দিয়েছেন তাতে টাটাগোষ্ঠী শিল্প করবেন। এ নিয়ে চুক্তিও হয়। পশ্চিমবঙ্গ সরকার তা পলিটব্যুরোতে পাঠায়। কিন্তু পলিটব্যুরো সেই প্রস্তাবকে ফিরিয়ে দেয়। তারা একটা সংশোধিত প্রস্তাব কৃষকদের দেন। সম্ভবত এই ঘটনাটিকে অবলম্বন করেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করছেন, সিপিএম টাটাকে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং টাটা চলে গিয়েছে। কিন্তু এই প্রস্তাবটি আসলে টাটার কাছে যায়নি। কারণ কোনও পক্ষই কোনও প্রস্তাব ঠিক করতে পারেনি। টাটা চলে গিয়েছে সিঙ্গুর আন্দোলনের ফলেই। টাটার কাছে এই প্রস্তাব না যাওয়ায় তারা কী করে বুঝবে যে সমঝোতা হয়েছে? ফলে তার প্রত্যাখ্যান বা গ্রহণ কোনও প্রশ্নই আসেনি।’

রবীন্দ্রনাথবাবু আরও বলেন, ‘আমার মতে, টাটা চলে গিয়েছে আন্দোলনের ফলেই যার নেতৃত্ব দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে। পুলিসের অত্যাচারে, মাথায় বাড়ি মেরে অনিচ্ছুক কৃষকদের জমি কেড়ে নিয়ে শিল্প এখনও চাই না আমরা। আর তখনও চাইনি। সমঝোতার মাধ্যমে যদি টাটা এখানে শিল্প করত, ন্যানো কারখানা করত তাহলে ভাল হত। তাতে শিল্পের একটা পরিবেশ গড়ে উঠত। সিঙ্গুর-সহ গোটা পশ্চিমবঙ্গে হয়তো শিল্পের পরিবেশ অন্য রকম হতে পারত। কিন্তু সেই সুযোগ আর হয়নি।’

রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেন ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে সিঙ্গুর কেন্দ্রে তাঁরই প্রতিদ্বন্দ্বী বেচারাম মান্না। সিঙ্গুরের ‘মাস্টারমশাই’কে আক্রমণ করে বেচা বলেন, ‘তিনি যখন আমাদের সঙ্গে আন্দোলন করছিলেন তখন তাঁর মস্তিষ্ক ঠিক ছিল। এখন বয়স হয়েছে, তিনি কোথায় আছেন, কী অবস্থানে আছেন তা নিজেই জানেন না। তাঁর কথা মানুষ বিশ্বাস করে না বলেই সিঙ্গুরের মানুষ তাঁকে পরাজিত করেছে। তাঁর কথার কোনও মূল্য নেই।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *