ক্ষোভে ফুঁসছে মোরবির দুর্ঘটনায় নিহত বাংলার যুবকের পরিবারের

24Hrs Tv, ওয়েব ডেস্কঃ ভিনরাজ্যে ছুটির দিনে বেড়াতে গিয়ে বিপত্তি। কিছুটা শোক সামলে ছেলের মরদেহ ফেরার অপেক্ষায় প্রহর গুনছিলেন প্রিয়জনরা। কিন্তু সেই দেহ যেভাবে ফিরল, তাতে চমকে উঠলেন তাঁরা। রক্তাক্ত মুখ, চেনার উপায় নেই, শুধুমাত্র পোশাক দেখে ছেলের দেহ বলে চিনতে পারছেন মা। মৃত হাবিবুলকে সঙ্গে নিয়ে যাঁরা ফিরেছিলেন, কোনও সাহায্যই করেনি গুজরাট সরকার এমনটাই অভিযোগ উঠেছে। বিমান ভাড়া পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। ধার করে দেহ ফেরাতে হয়েছে এমনই পরিবারের দাবি।
গত রবিবার ছুটির দিনে বন্ধুদের সঙ্গে গুজরাটের মোরবির মচ্ছু নদীর ওপরের কেবল ব্রিজ দেখতে গিয়েছিলেন হাবিবুল। সেতু বিপর্যয়ে প্রাণ গিয়েছে বাংলার যুবকের। পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলী দু’নম্বর ব্লকের মুকসিমপাড়া পঞ্চায়েত কেশববাটি এলাকার বাসিন্দা, নিহত হাবিবুল শেখ। ছোট থেকে বেশ মেধাবী ছিলেন। তবে অভাব প্রতি মুহূর্তে স্বপ্নপূরণে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। একাদশ শ্রেণির পরই মেধাবী ছাত্র হাবিবুলকে পড়াশোনায় ইতি টানতে হয়। চাষবাস করে যা আয় হবে, তাতে সংসারের খরচ সামাল দিতে কালঘাম ছুটেছে বাবার। তাই নিজে আর সে পথে এগোননি। সেজন্য সোনার কাজ করতে পাড়ি দিয়েছিলেন গুজরাতে।
গত সোমবার রাত প্রায় আড়াইটে নাগাদ কফিনবন্দি মরদেহ পৌঁছয় কেশববাটিতে। মা লুৎফা বিবি মুখ দেখেই আঁতকে ওঠেন। রক্তেমাখা মুখ। দুই ভাই ইউসুফ ও সাবির তাঁকে নিয়ে এসেছেন। তাঁরাও গুজরাতে সোনার কাজ শিখতে গিয়েছিল। দেহ ঠিকভাবে ফেরত পাঠানো হয়নি এমনটাই অভিযোগ উঠেছে। তাঁর মা বলেন, “কোনওদিন ওর কোনও চাহিদা ছিল না। সংসারের অভাব ও বুঝত। তাই তো বাইরে কাজ করতে গিয়েছিল। কিন্তু এমনটা হবে, কল্পনাও করিনি।”
রাজ্যের মন্ত্রী তথা পূর্বস্থলীর বিধায়ক স্বপন দেবনাথ রাতেই হাবিবুলের বাড়িতে যান। সেখানে ছিলেন স্থানীয় বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায়, জেলা তৃণমূল সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়, বিডিও, আইসি-সহ জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের আধিকারিকরা। মহাদেবপুর হাই স্কুলে পড়াশোনা করতেন হাবিবুল। সেখান থেকেও এসেছিলেন শিক্ষকরা। প্রধান শিক্ষক জানান, হাবিবুলের মিষ্টি ব্যবহার ছিল, পরিশ্রমী, সবসময়ে মুখে হাসি লেগে থাকত। তাঁর এভাবে মৃত্যু মেনে নেওয়া যাচ্ছে না। এদিন ভোর ৫ঃ৫০ নাগাদ সমাধিস্ত করা হয় হাবিবুলকে। জেলা প্রশাসন সবরকমভাবে পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *